করোনা সংক্রমণে নয়, খাদ্যের অভাবে চলতি বছরে ২ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে । বৃহস্পতিবার এই চাঞ্চল্যকর পূর্বাভাস করল আন্তর্জাতিক চ্যরিটি সংস্থা অক্সফ্যাম।
করোনার আতঙ্কে কাঁপছে সারা বিশ্ব। কিন্তু তার থেকেও বেশি দারিদ্র এবং ক্ষুধা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মহামারী রুখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে তীব্র দারিদ্রতার মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে সতর্ক করল আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফাম । এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ না হলে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর থেকে বেশি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাবেন বলে আশঙ্কা করেছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি।
অক্সফ্যাম তাঁদের ‘দ্য হাঙ্গার ভাইরাস’ শীর্ষক রিপোর্টে জানিয়েছে যে, অতিমারীর জেরে কর্মসংস্থানে সামগ্রিক অবনতি, খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য সরবরাহে বাধা এবং সাহায্যের মাত্রা কমতে থাকায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে সারা বিশ্ব জুড়ে তীব্র খাদ্যাভাব সৃষ্টি হতে চলেছে।
অক্সফ্যাম-এর চিফ একজিকিউটিভ ড্যানি শ্রীসকান্দারাজাহের মতে ‘প্রতিটি দেশের সরকারের উচিত রাষ্ট্রপুঞ্জের ডাকে সাড়া দিয়ে করোনা তহবিলে অর্থ দান করা এবং বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে এই অতিমারীর মোকাবিলা করা।‘
অক্সফ্যাম-এর রিপোর্টে বিশ্বের ১০ টি জায়গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে আফগানিস্তান, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান অগ্রগণ্য, যেখানে খাদ্য সংকট তীব্র এবং তা তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে দেশে দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত, জারি হয়েছে কারফিউ। এ ছাড়া জনগণের চলাচলের উপরেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে এমনতিতেই দুর্বল দেশগুলিতে খাদ্য সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। টান পড়েছে সাধারণ মানুষের রোজগারে। ইয়েমেনে ইতিমধ্যেই খাদ্য সংকট তীব্রতর আকার নিয়েছে। সে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছেন। কখনও আধপেটা খেয়ে, কখনও আবার না খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের।
এর মধ্যে আফগানিস্তানের পরিস্থিতিও ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে দেশের আরও অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে অক্সফ্যাম তার সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের ২৫ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে ছিলেন। গত মে মাসে সেই সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৩৫ লক্ষ। আফগানিস্তানের বহু মানুষ কাজের সন্ধানে প্রতিবেশী দেশ ইরানে যান। কিন্তু করোনার কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকায় এবং ইরানের অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের আয়ে। এই কারনে গত কয়েক মাসে আফগানিস্তানের বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্রমশ দারিদ্রের কবলে পড়ছেন বলে তাদের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে জানিয়েছে এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি।
এছাড়াও ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলেও খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ফসল তোলার মরশুমে কৃষকরা শ্রমিকের অভাবে খেতের ফসল নষ্ট হয়ে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে বিক্রেতারাও এই মরশুমে প্রত্যন্ত জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছে কৃষিজাত পণ্য কিনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর জেরে কমপক্ষে ১০ কোটি মানুষের আয় কমে গিয়েছে।’
এই পরিস্থিতিতে মহিলারা এবং নারীপ্রধান পরিবারগুলি সবচেয়ে বেশি অন্নসংকটে পড়েছে, কারণ খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এই দেশগুলিতে এখনও নারীই পালন করে থাকেন। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে গেলে আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া পরিত্রাণ অসম্ভব।