বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পরে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বদল। নয়া নীতিতে একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। স্কুল শিক্ষায় মাতৃভাষা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (National Education Policy 2020) ঘোষণা করল । এই নতুন নীতিতে স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সংস্কারমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০৩৫ সালের মধ্যে স্কুল স্তরের পড়াশোনা পাশ করার পরে অন্তত ৫০ শতাংশ পড়ুয়া যাতে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি হয় তার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি মাল্টিপল এন্ট্রি এবং এক্সিটের সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতিতে। যে কোনও সময় সহজে ভর্তি হওয়া যাবে কলেজে এবং বেরিয়ে যাওয়াও যাবে। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা পদ্ধতিতেও বদল আসছে। এখনকার মতো স্কুল শিক্ষায় ১০+২ মডেল আর থাকছে না। পরিবর্তে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
মানবসম্পদ ও উন্নয়নমন্ত্রী (শিক্ষামন্ত্রী হতে চলেছেন) রমেশ পোখরিয়াল জানিয়েছেন, প্রথম শ্রেণিতে ভরতির আগে তিন বছরের প্রাক-স্কুল শিক্ষা হবে। আর স্কুলজীবন হবে ১২ বছরের। সেটিকে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থায় ভাঙা হয়েছে। নয়া ব্যবস্থায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সঙ্গে সেই তিন বছর মিলিয়ে মোট পাঁচ বছরের ভিত তৈরি করা হবে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম পর্যন্ত প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে পরিচিত হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হবে মাঝারি পর্বের শিক্ষা। শেষ পর্যায়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি মাধ্যমিক শিক্ষা হিসেবে পরিচিত হবে।
নয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বিশেষ পরীক্ষা হবে। একইসঙ্গে দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা চালু থাকবে। তবে তা ‘সহজতর’ করা হচ্ছে। বোর্ড পরীক্ষায় মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে প্রয়োগযোগ্য শিক্ষা, দক্ষতা, পারদর্শিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। পাশাপাশি, ধীরে ধীরে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার ‘সুবিধাজনক’ মডেল তৈরি করতে পারে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলি। যেমন – বার্ষিক বা সেমেস্টার বা মডিউলার বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। অথবা সেই মডেলের সব বিষয় থাকবে এবং শুরু হবে অঙ্ক দিয়ে। দুটি স্তরে দু’ভাগে পরীক্ষা নেওয়া হবে – অবজেকটিভ বা ছোটো প্রশ্ন এবং ব্যাখ্যামূলক বা বড়ো প্রশ্নের ধাঁচে।
এদিন দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছে। একবিংশ শতকের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে নয়া শিক্ষানীতি প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ৩৪ বছরে শিক্ষানীতিতে কোনও বদল আসেনি। ফলে নয়া নীতি খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। আমার প্রত্যাশা সমগ্র সমাজ, দেশ তথা বিশ্ব নয়া শিক্ষানীতিকে স্বাগত জানাবে।’
উচ্চ শিক্ষাসচিব অমিত খারে জানিয়েছেন যে, নয়া নীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে শিক্ষা, প্রশাসনিক এবং অর্থনীতিক ক্ষেত্রে স্বশাসন এবং সমস্ত উচ্চ শিক্ষা জন্য একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা বলা হয়েছে।
নয়া নীতিতে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
১) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় জোর।
২) স্কুলের পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করে মূল ধারনায় নামিয়ে আনা।
৩) ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা।
৪) মার্কশিটে শুধুমাত্র নম্বর এবং পরিসংখ্যানের পরিবর্তে প্রাধান্য পাবে পড়ুয়ার দক্ষতা এবং যোগ্যতা।
৫) পড়ুয়াদের জ্ঞানের প্রয়োগিক দিকের উপরে ভিত্তি করে বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
৬) M.Phil কোর্স উঠে যেতে চলেছে।
৭) ল’ এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় আসতে চলেছে।
৮) সরকারি এবং বেসরকারি নির্বিশেষে সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে।
৯) যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপির ৬ শতাংশ লগ্নি করবে সরকার।
১০) যে কোনও অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিদর্শনের পরিবর্তে স্বচ্ছতা ভিত্তিক স্বঘোষিত ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে।
১১) আঞ্চলিক ভাষায় অনলাইন কোর্সে জোর।
১২) সবার কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার উপরে জোর। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশে ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতার লক্ষ্য পূরণ।