মানবদেহে প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আপনার পেশী, ত্বক, উৎসেচক এবং হরমোনগুলির গঠনে এবং এটি শরীরের কোষগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোটিন-এর অভাব বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার কারন। প্রোটিন কম খাওয়ানোও উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ এটি সময়ের সাথে সাথে আপনার শরীরে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রোটিনের ঘাটতি কী?
প্রোটিনের ঘাটতি তখনই দেখা দেয় যখন আপনার খাবারগুলি আপনার শরীরের প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে অক্ষম হয়। বিশ্বব্যাপী আনুমানিক এক বিলিয়ন মানুষ প্রোটিন ঘাটতির দ্বারা ভোগেন। সমস্যাটি বিশেষত মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মারাত্মক, যেখানে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাচ্চারা তাদের খাবারগুলি থেকে খুব কম প্রোটিন পায়।
উন্নত দেশগুলিতেও এমন লোকেরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যারা ভারসাম্যহীন ডায়েট অনুসরণ করেন। সত্যিকারের প্রোটিনের ঘাটতি পশ্চিমের দেশগুলিতে অস্বাভাবিক হলেও কিছু লোক তাদের ডায়েট থেকে এটা খুবই কম পরিমাণে পান। খুব অল্প প্রোটিনের ফলে শরীরের গঠনে পরিবর্তন হতে পারে, যেমন পেশীগুলির নষ্ট হয়ে যাওয়া। প্রোটিনের ঘাটতি শরীরের কার্যকারিতার প্রায় সমস্ত দিককে প্রভাবিত করতে পারে।
নিজেকে সুস্থ রাখতে ও শারীরিক কার্যকলাপ ভালোভাবে বহাল রাখতে চাইতে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রোটিন আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে, শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ক্ষুধাভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয়। ভীষণ প্রয়োজনীয় এই পুষ্টি উপাদানটির ঘাটতি থেকে বেশ কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। যা থেকে সহজেই বোঝা যায় শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জানুন এমন কিছু উপসর্গ সম্পর্কে।
ত্বক, চুল ও নখের সমস্যা
শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে ত্বক, চুল ও নখের উপর তার প্রভাব পড়ে। ত্বকে লালচে ভাব দেখা দেয়, নখ অতিরিক্ত ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং চুল পাতলা ও ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। এই লক্ষণগুলো প্রোটিনের ঘাটতি থেকেই হয়।
পেশী দুর্বল হয়ে যায়
আমাদের শরীরের অধিকাংশ পেশীই গঠিত হয় প্রোটিনের সাহায্যে। ফলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থেকে পেশীর দুর্বল হয়ে যাওয়া ও পেশীর কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রোটিন ঘাটতির প্রথম লক্ষণ হিসেবে এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়
প্রোটিনের ঘাটতি থেকে শুধু পেশী নয়, হাড়-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এটা হাড়ের দৃঢ়তা ও ঘনত্বকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রোটিন গ্রহণ করা না হলে হাড়ের সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন – আমাদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ কী ? জেনে রাখা ভালো
ঘনঘন ক্ষুধাভাব দেখা দেওয়া
দীর্ঘ সময়ের জন্য অপর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণের ফলে ঘনঘন ক্ষুধাভাব দেখা দেয়। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, এতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁক দেখা দেয়। যার ফলস্বরূপ ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক বেশি।
ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়
প্রোটিনের ঘাটতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেও নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। এর ফলে অনেক সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজনের চাইতে কমে যায় এবং ইনফেকশজনিত সমস্যা ভালো হতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।
ফ্যাটি লিভার
প্রোটিনের ঘাটতির আরও একটি সাধারণ লক্ষণ হ’ল ফ্যাটি লিভার, বা লিভারের কোষগুলিতে ফ্যাট জমা।
বাচ্চাদের শরীরের সঠিক বৃদ্ধিতে বাধা
প্রোটিন কেবল হাড়ের ভর এবং পেশী তৈরি করতে সহায়তা করে না, তবে এটি দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয়। শিশুদের শরীরের যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর প্রোটিন গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন – ভিটামিন-এ : কেন প্রয়োজন ? এবং এর উৎসগুলি সম্পর্কে জানুন
প্রোটিন বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায় যেমন সামুদ্রিক খাবার, সয়া, ডিম, মটরশুটি, দুধ, পনির, দই, বাদাম, ওটস, মুরগী, কুটির পনির, ব্রোকলি, টুনা, কুইনো, মসুর, কুমড়োর বীজ, ফ্ল্যাকসিড, সূর্যমুখী বীজ, মাছ (সকল প্রকারের) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে , চিংড়ি, চিনাবাদাম এদের মধ্যে অন্যতম।
তাই চলুন স্বাস্থ্যের উন্নতির পথে বাধা বা ঘাটতি এড়াতে পর্যাপ্ত প্রোটিনের গ্রহণ নিশ্চিত করুন। এছাড়াও, দীর্ঘকালীন সমস্যা এড়াতে আপনি যদি এই লক্ষণগুলি দেখতে পান তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
তথ্যসূত্রঃ এনডিটিভি