সম্পূর্ণ এক অচেনা আবহে যাত্রা শুরু হতে চলেছে মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের। তাঁর যাত্রা উপলক্ষ্যে এমন পরিস্থিতির সাক্ষী আগে কখনও থাকেনি পুরী। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে আজ হতে চলেছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।
এই সময়ে পুরীর মন্দির চত্বরে ভক্তদের প্রবেশ রুখতে সংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। মন্দিরের আশেপাশের হোটেল ও বাড়ির ছাদে নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে যাতায়াত। এই করোনা মহামারীর পরিস্থিতিতে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বলয়ের ঘেরাটোপের মধ্যেই আজ মঙ্গলবার পুরীতে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। সরকারি নির্দেশিকায় জগন্নাথদেবের শহরে ভক্তকুলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।রথ টানবেন মন্দিরের সেবায়েতগন। রথের দড়ি টানার আগে সেবায়েতদের করোনার পরীক্ষা এবং মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । সব মিলিয়ে এক অচেনা অভূতপূর্ব পরিবেশ। এই রথযাত্রায় যথা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার কথাও বলা হচ্ছে।
সোমবার দুপুর থেকেই জগন্নাথ দেবের পুজো আচারের রীতিনীতি চূড়ান্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে মন্দির সোসাইটি। পুরীর মন্দিরের মুখ্য দৈতাপতি রাজেশ দৈতাপতি জানান, “সকাল সাতটায় রথে উঠবেন মহাপ্রভু। তারপর রাজা এসে ঝাড়ু দেবেন। এরপর মহাপ্রভুর দর্শন করবেন শঙ্করাচার্য। এই সবের পর দুপুর বারোটা নাগাদ জগন্নাথ দেবের রথ গুন্ডিচায় মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।” তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করবে মহাপ্রভুর রথ।
প্রসঙ্গত গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র পুরীতেই রথযাত্রার অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সর্বোচ্চ আদালত এও জানিয়েছিল, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকারই। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় ঘোষণা মাত্র শুধু দুটি শব্দই টুইট করেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক – “জয় জগন্নাথ”। বলাবাহুল্য এর অর্থ একটাই – পুরীতে রথযাত্রা হবে। শীর্ষ আদালত এও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, শুধু পুরীর রথের ক্ষেত্রেই এই অনুমতি কার্যকর হবে। বাকি আর কোথাও রথযাত্রা হবে না। যার মানে, পশ্চিম বাংলার মাহেশে বা বারুইপুরে বা ইসকনের রথযাত্রা এবার হবে না।
গত বৃহস্পতিবারই দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, করোনা পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই এবছর পুরীর রথযাত্রায় অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। করোনা মহামারীর মধ্যে পুরীতে রথযাত্রা যাতে না হয়, সেজন্য পিটিশন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে মন্তব্য করেন, “আমরা যদি রথযাত্রায় অনুমতি দিই তাহলে প্রভু জগন্নাথ আমাদের ক্ষমা করবেন না।”
শুক্রবার শীর্ষ আদালতের রায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনেই চলবে । তারপর শনিবার পুরীর রাজা গজপতি দিব্যসিংহ দেব দীর্ঘ চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীকে। যার মূল কথা রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাক। রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হোক। তা ছাড়া পুরীর শঙ্করাচার্যও সেই দাবি জানিয়েছিলেন।
সন্দেহ নেই পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। পুরীর রাজাই পুরীর মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় নবীন পট্টনায়েক সরকার। রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে শনিবার পুরীর মন্দিরের বাইরে বিক্ষোভ দেখান পুরোহিত এবং পাণ্ডারা। তাঁদের বক্তব্য ছিল রথযাত্রায় অনুমতি দেওয়া হোক। দুর্যোগ, মহামারী কোনও কারণেই রথযাত্রা বন্ধ হতে পারে না।
“প্রথা অনুযায়ী জগন্নাথ দেব যদি রথযাত্রায় না বেরোতে পারেন তাহলে ১২ বছর তিনি মন্দিরে আটকা পড়ে থাকবেন। তাই রথযাত্রায় অনুমতি দিক কেন্দ্রীয় সরকার।” কেন্দ্র ও ওড়িশা রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, তারা রথযাত্রায় রাজি। তারপরই শর্ত সাপেক্ষে রথযাত্রায় অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
ছবি – ইন্ডিয়াটিভি নিউজ