দই একটি জনপ্রিয় দুগ্ধজাত পণ্য যা দুধের ব্যাকটেরিয়াল ফারমেন্টেশন দ্বারা তৈরি। এই প্রক্রিয়াটি ল্যাকটিক অ্যাসিডের দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। এটি এমন একটি পদার্থ যা দুধের প্রোটিনগুলির পরিবর্তন করে এবং দইকে সুস্বাদু করে তোলে। দই সব ধরণের দুধ থেকেই তৈরি করা যায়। স্কিম মিল্ক থেকে তৈরি দইকে ফ্যাটহীন হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে সাধারণ দুধ থেকে তৈরি দইগুলি ফ্যাটযুক্ত হিসাবে ধরা হয়।
দইয়ের স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটুকু ? প্রতিদিনের কাজের চাপে সময়ে খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের সাথে মানসিক দুশ্চিন্তা এবং অনিদ্রা প্রায় নিত্য দিনের সঙ্গী। শারীরিক কসরত, জিম, যোগব্যায়াম অনিয়মিত, ফলে শরীরকে সইতে হয় অনেক অনিয়ম। এর ফলে শরীরে মেদের পরিমাণ বাড়তে পারে। দই যেমন শরীরের টক্সিন দূর করে তাকে তরতাজা করে তেমনই বাড়তি মেদ ঝড়াতেও ভরসা টক দই। দই হৃদরোগ এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। শরীরের প্রতি খেয়াল রাখতে জরুরি ডি-টক্সিফাই করা, এক্ষেত্রে ভরসা রাখুন টক দইয়ের উপর।
খাবার হজমের জন্য টক দইয়ের ফারমেন্টেড এনজাইম ভীষণ উপযোগী। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রো-বায়োটিক উপাদান এটা থেকে পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই সব প্রো-বায়োটিক খুবই উপকারী।
দই থেকে কি কি পাওয়া যায়
দই-তে দেহের প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পুষ্টি উপাদান থাকে।এটিতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা দাঁত এবং হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয়। কেবলমাত্র এক কাপ দই আপনার প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের ৪৯ শতাংশ সরবরাহ করে।
এর মধ্যে থাকা ভিটামিন, বিশেষত ভিটামিন বি ১২ এবং রাইবোফ্লাভিন, উভয়ই হৃদরোগ এবং কিছু স্নায়বিক সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
এক কাপ দই থেকে আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনের ফসফরাসের ৩৮ শতাংশ , ম্যাগনেসিয়ামের ১২ শতাংশ এবং পটাসিয়ামের ১৮ শতাংশ পাওয়া যায়। এই খনিজগুলি বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পরিপাক এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
জানুন দই এর উপকারিতা
- জিম-শারীরিক কসরত না হলে, অলস ভাবে শুয়ে-বসে থাকলে কোলেস্টরল বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। টক দই কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভাবে উপযোগী, এর মধ্যে ফ্যাটও কম থাকে ।
- শরীর ডিহাইড্রেট হয় কম জল খাওয়ার কারণে। এক্ষেত্রে শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিন জমা হতে পারে। তাই প্রতিদিন টক দই খাওয়ার অভ্যাস করলে তা রক্তকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- মানসিক উদ্বেগ, চাকরিজনিত দুশ্চিন্তা ও ঘুম না হওয়ার কারণে বা অনিয়মের জেরে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা বিপদে পড়েন। রক্তচাপের ওঠানামা ঠেকাতে নিয়মিত ডায়েটের তালিকায় রাখুন টক দই।
- অনেকেরই দুধ সহ্য হয় না । টক দই-কে কাজে লাগান সে ক্ষেত্রে। দুধের পুষ্টিগুণ পেয়ে যান টক দইয়ের মধ্যে ।
- অফিসে সারাদিন একনাগাড়ে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করেন, সারা দিনের দৌড়ঝাঁপ প্রায় বন্ধ। এক্ষেত্রে বাড়ির বানানো খাবার খেলেও ওজন বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। অযথা ভয় না পেয়ে কাজে লাগান টক দইয়ের উপকারিতাকে। শশা কুঁচির সঙ্গে টক দই মিশিয়ে খান, উপকার পাবেন।
- সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- অ্যালার্জির লক্ষণ হ্রাস করে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে অ্যালার্জি সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, তাই আপনি এক কাপ দই খাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।
- দই দুর্দান্ত শরীরচর্চার আগে বা পরের খাবার হিসাবে। দইতে থাকা কার্বোহাইড্রেট আপনাকে আপনার শরীরচর্চার মধ্যে শক্তি সরবরাহ করতে বা হারিয়ে যাওয়া শক্তি ফেরাতে সহায়তা করতে পারে।
- আপনাকে পেশী গঠনে সহায়তা করে। দই একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন যার অর্থ এটি শরীরের পেশী এবং অন্যান্য টিস্যু গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত অ্যামিনো অ্যাসিড ধারণ করে।
- দই আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করতে পারে।
- সবশেষে, দইতে থাকা প্রোটিন যা আপনাকে আরও দীর্ঘায়ু হতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন – আয়রনের ঘাটতি দূর করতে শিশুদের দিন এই খাবারগুলি
তথ্যসূত্রঃ নারীবার্তা, লাইফহ্যাক