কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের পুলিশের হাতে খুন হলেন আর এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। শুক্রবার আটলান্টায় রেশার্ড ব্রুকস নামে ওই ব্যক্তির উপরে গুলি করেন এক পুলিশকর্মী। তাঁকে গ্রেফতারের সময়ে পালানোর চেষ্টা করলে এই ঘটনা ঘটে।
রেস্তরাঁর সামনের নজরদারি ক্যামেরার ভিডিয়ো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, জর্জিয়া বুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিরেক্টর । অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন আটলান্টার মেয়র। আগ্নেয়াস্ত্রের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র।
দিনকয়েক আগেই জর্জের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে আসে ডেরিক অলি স্কট নামে এক কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার ভিডিয়ো। ২০১৯ সালে পুলিশি হেফাজতেই মৃত্যু হয়েছিল ডেরিকের। মাত্র ৪২ বছর বয়সে। ওকলাহোমা সিটি পুলিশের প্রকাশিত সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। ডেরিকের মৃত্যুর ভিডিয়োটি শ্যুট করা হয়েছিল একজন পুলিশকর্মীর বডি ক্যামেরায়।
সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, ঠিক জর্জের মতোই ডেরিকেরও গলায় হাঁটু গিয়ে বসে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মী। ডেরিক বারবার বলছেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না।’ কিন্তু সেই কথা কানেই তোলেননি ওই পুলিশকর্মী। ধীরেধীরে জর্জের মতোই নিস্তেজ হয়ে পড়েন ডেরিক। মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই এবার ঘটল রেশার্ড ব্রুকসের ঘটনা। ফের আগুন জ্বলার অপেক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আসলে আমেরিকায় খুব সাম্প্রতিক অতীতেও জর্জ, এরিক বা রেশার্ডরা আমেরিকায় শুধু কয়েকটা নাম কেবল। পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০১৩ থেকে ২০১৯- এই ৬ বছরে আমেরিকায় পুলিশের হাতে মৃত্যু হয়েছে ৭৬৬৬ জন কৃষ্ণাঙ্গের।
এই ক’বছরে এমন একটা মাসও যায়নি, যখন আমেরকিরা কোথাও না কোথাও পুলিশ কোনও কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করেনি। গড়ে ২৭ দিনে একজন করে কৃষ্ণাঙ্গকে ‘খুন’ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৯-এ প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে আমেরিকায় পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন ১০১৪ জন নাগরিক।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আমেরিকায় এই আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি জানান, যা ঘটছে তা গভীর সমস্যার ইঙ্গিত। যার শিকড় রয়েছে অনেক গভীরে।
ব্রুকসের মৃত্যুর এর পরে দক্ষিণ-পূর্ব আটলান্টার বিভিন্ন রাস্তায় জমায়েত হন প্রতিবাদীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের উপরে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশকর্মীরা, দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধও বেধে যায়। ওয়েন্ডিজ় রেস্তরা, যেখানে এই ঘটনার সূত্রপাত তার সামনেও অবরোধ করেন প্রতিবাদীরা। ভেঙে দেওয়া হয় রেস্তরাঁর কিছু অংশ এবং আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয় একাংশে।
ছবিসুত্রঃ এনওআইটাইমস